নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ভাড়া বাড়িয়ে বেকায়দায় পড়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অভ্যন্তরিন রুটের বাস মালিকরা। পূর্বের থেকে ভাড়ার পরিমান ৬০ ভাগ বেরে যাওয়ায় যাত্রী পাচ্ছে না তারা। বরং সল্প ভাড়ায় বিকল্প ব্যবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যাত্রা করছেন যাত্রীরা। এমন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরিন রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখবেন কিনা তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন মালিক পক্ষ। জানাগেছে, করোনা মাহামারী প্রতিরোধে লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে টানা দুই মাস ৮ দিন পরে লঞ্চ এবং বাসসহ গণপরিবহন সলচ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে গত ৩১ মে থেকে সারা দেশে দূরপাল্লার এবং অভ্যন্তরিন রুটে লঞ্চ ও বাস চলাচল শুরু হয়।
তবে ভাড়া জটিলতার কারণে এক দিন পরে অর্থাৎ ১ জুন বরিশাল তথ্য দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরিন রুটে বাস চলাচল শুরু করে মালিক সমিতি। গত ১ জুন থেকে অদ্যবদি বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও অভ্যন্তরিন রুটে যাত্রী পাচ্ছে না বাসগুলো। প্রশাসন থেকে নির্ধারন করে দেয়া ২৬ জন যাত্রীর স্থলে ৮-১০ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে বাসগুলোকে।
তবে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে ছোট যান অর্থাৎ থ্রি-হুইলার (মাহেন্দ্র), মিশুক এবং ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্যেও টাকা এবং সময় বাঁচাতে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গন্তব্যে যাত্রা করছেন তারা। এতে করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৩টি রুটে বাস চলাচল করছে। পূর্বের হিসাবে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা সর্বোচ্চ যাত্রীভাড়া ছিলো ২৪০ টাকা। ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির ফলে তা বেরে ৩৮৫ টাকা হয়েছে।
এছাড়া বরিশাল-ফকিরহাট ২২০ টাকার ভাড়া বেরে ৩৫০ টাকা, বরিশাল থেকে তালতলি ১৯০ টাকার ভাড়া বেরে ৩০৫ টাকা, বরিশাল থেকে আমতলী ১৪০ টাকার ভাড়া বেরে ২২৫ টাকা, বরিশাল থেকে বরগুনা ১৫০ টাকার ভাড়া বেড়ে ২৪০ টাকা, বরিশাল থেকে পিরোজপুর ১১০ টাকার ভাড়া বেড়ে ১৭৫ টাকা, বরিশাল থেকে খুলনা ১৮০ টাকার ভাড়া বেড়ে ২৯০ টাকা, বাগেরহাটে ১৬০ টাকার ভাড়া বেড়ে ২৫৫ টাকা, বরিশাল থেকে ঝালকাঠি ৩০ টাকার ভাড়া বেড়ে ৪৫ টাকা, বরিশাল থেকে পটুয়াখালী ৮০ টাকার ভাড়া বেড়ে ১৩০ টাকা, বরিশাল থেকে রনগোপালদী ১৭০ টাকার ভাড়া ২৭০ টাকা, বরিশাল থেকে বাকেরগঞ্জ রুটে ৪০ টাকার ভাড়া বেড়ে ৬৫ টাকা হয়েছে।
অপরদিকে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ৮টি রুটে বাস চলাচল করছে। এ রুটগুলোতেও ভাড়া বেরেছে ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে বরিশাল থেকে আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৮২ টাকার ভাড়া বেরে ১৩১ টাকা, বরিশাল হতে ভূরঘাট পূর্বের ৭১ টাকার ভাড়া বেড়ে ১১৪ টাকা, বরিশাল থেকে উজিরপুরের ধামুরা পর্যন্ত ৪৯ টাকার ভাড়া বেরে ৭৮ টাকা এবং সাতলা পর্যন্ত ৯০ টাকার ভাড়া বেরে ১৪৪ টাকা, নথুল্লাবাদ থেকে বাবুগঞ্জের মীরগঞ্জ পর্যন্ত ২৭ টাকার ভাড়া বেরে ৪৪ টাকা, নেছারাবাদ পর্যন্ত ৪৮ টাকার ভাড়া বেরে ৭৬ টাকা, নথুল্লাবাদ থেকে হিজলা উপজেলার ট্যাক পর্যন্ত ৭০ টাকার ভাড়া বেরে ১১২ টাকা হয়েছে। এমনি করে সকল রুটেই ৬০ শতাংশ ভাড়া বেরেছে। সরেজমিনে নগরীর নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে, একটি বাস যাত্রীর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছে। প্রতিটি বাসে যাত্রীদের দুই সিটের ভাড়া দিয়ে গাড়িতে উঠতে হচ্ছে। অথচ পাশে থাকা মাহেন্দ্রগুলো ৭-৮ জন যাত্রী নিয়ে কয়েক মিনিট পর পর গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। এতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও।
আলাপকালে গৌরনদীর বন্দরের বাসিন্দা এক মাহেন্দ্র যাত্রী আলামিন তালুকদার বিএসএল নিউজকে বলেন, ‘বাসে উঠতে হলে দুই সিটের ভাড়া দিতে হবে। তার মধ্যে আবার দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরে বাস ছাড়তে। এতে অর্থ এবং সময় দুটোরই অপচয় হচ্ছে। তাই করোনার ঝুঁকি সত্যেও মাহেন্দ্রতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হচ্ছে।
রূপাতলীস্থ বরিশাল জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বিএসএল নিউজকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। আমাদের শ্রমিকরা সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালালেও যাত্রীরা বাসে উঠছে না। তারা কম ভাড়ায় মাহেন্দ্র কিংবা সিএনজিতে করে গন্তব্যে যাত্রা করছে। এর ফলে সারা দিন গাড়ি চালিয়ে বাস শ্রমিকদের বেতনও হচ্ছে না। এমনিভাবে চলাতে গেলে সামনের দিকে বাস বন্ধ করে দেয়া ছাড়া মালিকদের অন্য কোন উপায় থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ইউনুস আলী খান বিএসএল নিউজকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে বাস চালাচ্ছি। কিন্তু তার পরেও যাত্রী পাচ্ছি না। যে যাত্রী হচ্ছে তা মাহেন্দ্র, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকে করে গন্তব্যে যাত্রা করছে। ভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুধু বাসের ভাড়া বাড়েনি। বরং ছোট যানগুলোতেও ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। বরিশাল থেকে গৌরনদীতে বর্ধিত বাস ভাড়া ৭০ টাকা রাখা হচ্ছে। আর থ্রি-হুইলারে নেয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। মাত্র ১০ টাকা বেশী-কমের প্রভাব তেমন একটা পড়ছে বলে মনে হচ্ছে না। কেননা নিরাপত্তার প্রশ্নে বাসের বিকল্প নেই।
বাস মালিক সমিতির শীর্ষ এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, সরকার থেকে আমাদের বাসে কতজন যাত্রী উঠবে সে বিষয়টি নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাসে যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং করছে। অথচ তাদের সামনে দিয়েই মাহেন্দ্র, মোটরসাইকেল, হলুদ অটোতেক স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করছে। কিন্তু বিষয়ে তারা কর্ণপাত করছে না। অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক এবং ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বন্ধর দাবি করেন বাস মালিক সমিতির এই নেতা।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এর সরকারি নম্বরে কল করে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে বরিশাল জেলা প্রশাসক এবং জেলা আরটিসির সভাপতি এসএম অজিয়র রহমান বিএসএল নিউজকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে সড়কে গণপরিবহন চলাচলের বিষয়টি তদারকির জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশকে বলা হয়েছে। তারা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন। তাছাড়া থ্রি-হুইলারে শেয়ারিং করে যাত্রী তোলাই অবৈধ। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আমরা তাদের রেজিষ্ট্রেশন বাতিলের জন্য সুপারিশ করবো। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে পুনরায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
Leave a Reply